আমি ১৯৭৯
সালের ২৬ শে জুলাই, বৃহস্পতবার ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে জন্মগ্রহন করি। আমার
মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম এবং বাবার নাম আব্দুল ওহাব তালুকদার। দাদার নাম
ইব্রাহীম তালুকদার। আমার বাবা আমার দাদার একমাত্র পুত্র সন্তান। আমার বাবা যখন
খুবই ছোট, বয়স প্রায় পাঁচ বছর তখন আমার দাদা মারা যান। ফলে বাবাকে ছোটকাল থেকেই
সংসার জীবনের হাল ধরতে হয়। আমার মা-বাবা উভয়ে খুবই ধার্মিক। আমার মা একজন আদর্শ
গৃহিনী। বাবার জীবন খুবই বৈচিত্রময়। জীবনের নানা বাঁধা-বিপত্তি ও বহু কষ্ট
অতিক্রম করতে হয় তাকে। অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং অভিলাষী ব্যক্তি তিনি। এক কথায় আজ
আমি সুখী কেবল তারই জন্য।
আমরা তিন
ভাই, এক বোন।
ভাই-বোনদের মধ্যে আমি তৃতীয়। বড় ভাই আমার চেয়ে নয় বছরের বড় এবং
বোন আমার চেয়ে ছয় বছরের বড়। ছোট ভাই আমার চেয়ে প্রায় দুই বছরের ছোট। নিজের
সম্পর্কে বলতে গেলে (পরিবারের সকলের মতানুযায়ী) এই টুকুই বলব যে পরিবারের আর
সবার থেকেই আমি একটু ব্যতিক্রম।
First Day at School
অথবা স্কুলের
প্রথম দিন সম্পর্কে
essay বা রচনা আমরা সবাই লিখে থাকি।
সত্যিকার অর্থে স্কুল জীবনের প্রথম দিন সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা হৃদয়ঙগম করা
আর উত্তরপত্রে সে সম্পর্কে রচনার লেখার বিষয়টা মোটেই এক নয়। কারন বাস্তব
অভিজ্ঞতায়া আছে অতীত জীবনের সুখ মাখা এক স্মৃতি আর রচনা লেখায় আছে ভবিষ্যতের
পাস-ফেলের এক নীতি। আর বাস্তবে স্কুলের প্রথম দিনের স্মৃতি সে রকম কার মনেও থাকে
না। তরপরেও যতটুকু মনে আছে তাও জীবনের এক অন্যতম স্মৃতি যা সবার ক্ষেত্রেই
প্রযোজ্য।
১৯৮৪-তে
কোন এক বিকেলে মা-এর কাছ থেকে জানতে পারলাম আমাকে স্কুলে যেতে হবে। একদিন সকালে
আমি সহ আরোও দুইজন স্কুলে গেলাম। সেখানকার প্রধান শিক্ষিকা পরীক্ষা নিলেন। ক -
খ - গ, A - B - C ইত্যাদি
ধরনের পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষার একটি বিষয় মনে আছে, তা হলো C
লিখতে গিয়ে তা নিচের দিকে বেঁকে
গিয়েছিল। যাই হোক, অবশেষে প্লে-গ্রুপ-এ
ভর্তী হলাম। এই হলো স্মৃতিতে জমে থাকা স্কুলের প্রথম দিন। ও হ্যা, স্কুলের নাম
ছিল শাপলা কিন্ডার গার্টেন।
সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন শেষে ১২৮৭ সালে এলাকার নিকটবর্তী স্কুল গেন্ডারিয়া
উচ্চ বিদ্যালয়-এ দ্বিতীয়
শ্রেনীতে ভর্তী হলাম। একটি কথা না বললেই নয়, পড়া-শোনার প্রথম দিকে নিজেকে খুবই
অসহায় মনে হতো। পড়া-শোনার প্রতি সবসময় এক ধরনের ভীতি কাজ করত। এর কারন সম্ভবতঃ
উপযুক্ত গাইডেন্স-এর
অভাব। অবশ্য পরবর্তীতে এ ধরনের সমস্যা নিজে নিজেই কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছি।
পড়া-শোনায় আমার ব্রত-
এ ধরনের মন মানসিকতা এক সময় আমার মধ্যে গড়ে উঠেছিল।
এভাবে আস্তে
আস্তে স্কুলের গন্ডি অতিক্রম করে অবশেষে ১৯৯৬ সালে এস. এস. সি. পরীক্ষায় অংশ
গ্রহন করলাম। পরীক্ষার সিট পরেছিল বাংলাদেশ
ব্যাঙ্ক কলনী উচ্চ বিদ্যালয়-এ।
পরীক্ষার প্রথম দিন মা কান্নাকাটি করেছিল -এও আরেক স্মৃতি। মায়েরা সন্তানদের
বিশেষ কোন কর্মকান্ডের ব্যাপারে যে খুবই আবেগপ্রবন তখন তা বুঝতে পেরেছিলাম।
জীবনের
ছোট্ট একটা সময় আমাকে পরিবার থেকে বাইরে থাকতে হয়েছিল। এস. এস. সি. পরীক্ষার
পরপরই আমাকে দাওয়াতে তাবলীগের কাজে চল্লিশ দিনের জন্য বের হয়ে পড়ি। একে
তাবলিগের ভাশায় বলে এক চিল্লা।
পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় আমাদের দাওয়াতের কাজের স্থান নির্ধারিত হয়। পরিবার
থেকে বিচ্ছিন্ন এবং অনভ্যস্ত থাকায় প্রথম কয়েকদিন খুবই খারাপ লাগছিল। বুক ডুঁকড়ে
কান্না পাচ্ছিল।পরবর্তীতে অবশ্য অন্যান্য সাথীদের সংস্পর্শে এসে নিজেকে শান্ত
করতে পেরেছিলাম।
|